ভ্রমণ মানুষকে কুপমন্ডুকতার ছত্রছায়া থেকে মুক্ত করে বিশাল পৃথিবীর অপার সৌন্দর্যের মধ্যে ঠাঁই দেয়। মানুষের মনকে করে তোলে উদার। ক্ষুদ্র এ মানব জীবনকে দান করে গতিশীলতা। আর সেই ভ্রমণ যদি হয় শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে তাহলে তো কথাই নেই। শিক্ষা সফরের মাধ্যমে মানুষের অসম্পূর্ণ ও আবদ্ধ জ্ঞান বিকাশ লাভের সুযোগ পায়। শিক্ষা সফর একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনকে করে আনন্দময় ও পরিপূর্ণ। শিক্ষা সফরের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সুযোগ পায় নিজের দেশ ও জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি তথা নিজের শেকড় সম্পর্কে জানতে। এছাড়া দেশের বাইরে সফরের মাধ্যমে তারা নানা দেশ ও জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও জীবনযাত্রার সাথে পরিচিত হতে পারে যা তাদের জ্ঞানের সীমাকে প্রসারিত করে।
বই পড়ে যে শিক্ষা অর্জন করা হয় তা পরিপূর্ণ শিক্ষা নয়। শিক্ষার সাথে বাস্তব জ্ঞানের সংমিশ্রণ ঘটাতে পারলেই তা হয়ে উঠে পরিপূর্ণ শিক্ষা। নানা রকম ব্যবহারিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রে এ পূর্ণতা অর্জন করা যায়। এসব কর্মকান্ডের মধ্যে শিক্ষা সফর অন্যতম। শিক্ষা সফরে গিয়ে শিক্ষার্থীরা শুধু আনন্দ লাভই করে না, বরং ঐতিহাসিক বিভিন্ন বিষয় প্রত্যক্ষ করে এবং সে বিষয়গুলো সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করে। তাই প্রকৃত ও পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা অর্জনের জন্য শিক্ষা সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ছাত্র জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য পড়াশুনা করা। কিন্তু সারাক্ষণ ক্লাস, পড়া, পরীক্ষা এসবের মাঝে থাকতে থাকতে এক সময় পড়াশুনার প্রতি একঘেয়েমী চলে আসে। সামান্য একটু অবসরের জন্য মন আকুল হয়ে উঠে। লেখাপড়ার বেশি চাপে অনেক সময় ছাত্রছাত্রীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। শারীরিক অসুস্থতা মনকেও প্রভাবিত করে। তাই পড়াশুনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের চিত্তবিনোদনের প্রয়োজন আছে। এই বিনোদনের সর্বোৎকৃষ্ট উপায় শিক্ষা সফর। শিক্ষা সফরের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যেমন জ্ঞান অর্জন করতে পারে তেমনি শারীরিক ও মানসিকভাবেও প্রশান্তি লাভ করতে পারে।
আটপৌড়ে জীবনের একঘেয়েমী কাটাতে অনেক মানুষ ভ্রমণ করে দেশ দেশান্তরে। দেশভ্রমণ তাদের কাছে বিনোদনের মাধ্যম। কিন্তু শিক্ষা সফর নিছক সময় কাটানো কিংবা বিনোদনের উদ্দেশ্যে করা হয় না। শিক্ষাসফরের প্রধান উদ্দেশ্য পাঠ্যসূচি সংক্রান্ত জ্ঞান অর্জন, অজানা পৃথিবীর বিচিত্র রূপ প্রত্যক্ষ করা। তাই দেশভ্রমণ ও শিক্ষাসফর এক কথা নয়।
শিক্ষাসফর শিক্ষার অন্যতম একটি অংশ। বই থেকে অর্জিত জ্ঞান অন্তরে ধারণ করে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা সফরে যায় সে অর্জিত জ্ঞান প্রত্যক্ষ করতে। বইয়ের পড়া আর চোখের দেখা এই দুইয়ে মিলে পরিপূর্ণভাবে আলোকিত হয়ে উঠে শিক্ষার্থীর অন্তর্লোক। শিক্ষা সফর শিক্ষার্থীদের যেমন মুক্তি দেয় লেখাপড়ার একঘেয়েমী থেকে, তেমনি তাদের পুস্তক লব্ধ জ্ঞানকে দৃঢ়তা ও স্থায়িত্ব প্রদান করে। শিক্ষা সফরে গিয়ে বিশাল পৃথিবীর অপরিমিত সৌন্দর্য অবলোকনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা তাদের সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত করারও সুযোগ পায়। তাই শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার প্রতি একঘেয়েমী থেকে মুক্তি দিতে এবং তাদের মানসিক ভাবে প্রশান্তি প্রদানের জন্য বিসিআই ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরেও শিক্ষা সফরের আয়জন করেছে। শিক্ষা সফের স্থান নির্ধারন করা হয়েছেঃ স্বপ্নচুড়া, ময়নামতি, শালবন বিহার, বার্ড’স, ওয়ার সিমেট্রি, কুমিল্লা।